Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সংবাদপত্র

অনুসন্ধান করুন

# শিরোনাম সম্পাদক যোগাযোগ ফোন
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্যি রক্তদহ বিল মোঃ শরীফুল ইসলাম

 

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্যি রক্তদহ বিল

আজ আমরা যে বিলের গল্প বলবো তার নাম রক্তদহ বিল। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭ শতাব্দীর শেষের দিকে ফকির মজনু শাহ আদমদীঘিসহ আশে পাশের এলাকায় ইংরেজদের দোসর জমিদারদের হাত থেকে বাঁচাতে আবারও  তৎপরতা শুরু করেন। সে সময় প্রজারা জমিদার ও ইংরেজদের দ্বারা প্রনিয়ত অর্থনৈতিক ও শারিরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতো। তাদের উপর এমনভাবে কর ধার্য করা হতো, যা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশ্ন্তা হতে হতো। ফলে প্রজাদের বাধ্য হয়ে জমিদারদের নায়েব গোমস্তা এমনকি ইংরেজদের সাধারণ সিপাহী ও কর্মচারীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত সুদে টাকা ধার নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। এই ধার দেওয়া টাকা সুদ আদায় করতে শক্তি প্রয়োগ করা হতো। এভাবে প্রজাশোষণ যখন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে ঠিক সেই সময় অর্থাৎ ১৭৮৬ সালে এই এলাকায় অস্ত্রধারী সন্নাসী ও ফকিরদের সাথে নিয়ে ফকির মজনু শাহ এর আগমন ঘটে। সে সময় আদমদীঘির অধিকাংশ এলাকা ছিল গহীন অরণ্যাবৃত এলাকা। তারা এ সব অরণ্য থেকে বের হয়ে এসে ইংরেজ শাসকদের ও তাদের এদেশীয় দোসর জমিদারদের উপর হামলা চালাতে শুরু করেন। যেখানেই প্রজা নিপীড়ন হতো সেখানেই মজনু বাহিনীর উপস্থিতি ঘটত। প্রজাদের সমর্থন নিয়ে ফকির মজনু বাহিনীর অভিযানে ইংরেজ ও জমিদারদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মজনু বাহিনী জমিদারদের কাছ থেকে নির্ধারিত চাঁদা আদায় করে গরীব প্রজাদের বিলিয়ে দিতেন। তৎকালীন জমিদারদের মধ্যে কয়েকজন জমিদারকে অপহরণ করে আদমদীঘির কড়ই গ্রামের গভীর অরণ্যে লুকিয়ে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে আবার ছেড়ে দিতেন। এক সময় কড়ই জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী মজনু শাহ এর ভয়ে ভীত হয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে ময়মনসিহে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রামের জমিদারের কন্যা রানী ভবানী যখন নাটোরের জমিদার ছিলেন তখন ফকির মজনু শাহ এর বাহিনী শুধু মাত্র রানী ভবানীকে অত্যন্ত সমীহ করতেন। বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ফকির মজনু নিজ হাতে রানী ভবানীর নিকট পত্র লিখে তার সফলতা কামনা করেছিলেন। যখন জমিদার ও ইংরেজ সরকার এদের দমন করার জন্য সেনা নায়ক লেফটেন্যান্ট আইনস্টাইনের নেতৃত্বে একটি বড় আকারের বাহিনী প্রেরণ করেন। এ সংবাদ পাওয়ার পর দুর্ধর্ষ ফকির বাহিনীর সদস্যরা ২৪ ঘন্টার নোটিশে কড়ই জঙ্গল এলাকায় সমবেত হন। এদিকে ইংরেজ সৈন্যরা আত্রাই নদী হয়ে নৌকাযোগে বিল ভোমরা দিয়ে গোপনে কড়ই জঙ্গল ঘেরা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। এ সংবাদ পেয়ে মজনু বাহিনী এগিয়ে এসে বিল ভোমরায় তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষ প্রচন্ড যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রচুর লোক হতাহত হওয়ায় বিল ভোমরার পানি রক্তের জোয়ারে লাল রং ধারণকর্ েসেই থেকে বিল ভোমরা ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল নাম ধারণ করে আসছে। ঐ যুদ্ধে মজনু শাহ এর একজন শীর্ষ সহযোগী শহীদ হন। তার লাশ ঐ বিলের মধ্যেই একটু উঁচু স্থানে দাফন করা হয়। সেখানে একটি বটগাছ সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। প্রবীন লোকদের মতে, যত বড় বন্যা হোকনা কেন ঐ কবরে কখনও পানি উঠে না অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল সংস্কারের অভাবে দিন দিন তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ফাল্গুণ চৈত্র মাসে সেখানে আর পানি দেখা যায় না।